বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

তিন কারণে আবারো আলোচনায় নারায়ণগঞ্জ

আবদুর রহিম
সম্প্রতি সময়ে নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। সিদ্ধিরগঞ্জে ট্রিপল মার্ডারের রেশ না কাটতেই আলোচনায় উঠে আসে টেন্ডারবয় খ্যাত জিকে শামীমের বিষয়টি। এ ঘটনার সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই ফতুল্লায় সন্ধান মিলে জঙ্গি আস্তানার। চলতি মাসে আলোচিত তিন ঘটনায় নতুন করে ফের আলোচনায় আসে নারায়ণগঞ্জ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি ঘটনার কারণে ঘুরে ফিরে নারায়ণগঞ্জ গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনামে পরিনত হয়েছে। একের পর এক আলোচিত ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের প্রতি এ জেলার বাইরের মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ। তবে সবচেয়ে বেশী আলোচনা হয় জঙ্গি আস্তানার সন্ধানের খবরটি নিয়ে।

সূত্রমতে, চলতি মাসের ১৯ তারিখ বৃহস্পতিবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের সিআই খোলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন ছয় তলার ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত হয় সুমন মিয়ার স্ত্রী নাজমিন (২৮), তাঁর মেয়ে নুসরাত (৮) ও খাদিজা (২)। গুরুতর জখম নাসরিনের বোন ইয়াসমিনের মেয়ে সুমাইয়াকে (১৫) আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। যদিও ঘটনার দিন রাতেই নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে তিন খুনের ঘাতক আব্বাস মিয়াকে হাজির করা হয়। ওই সময়ে জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে জানান, ‘বৃহস্পতিবার সকালে হত্যাকান্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুপুরে আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আব্বাস আদালতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবান বন্দি দিয়েছে। সে জানিয়েছে শ্যালক তাকে একদিন চড় মারছে। এ কারণেই জিদ ছিল। প্রায়শই আব্বাসের স্ত্রী ও মেয়ে নাকি শ্যালক ও শ্যালিকার বাসয় চলে যেত। তাই সে মনে মনে ঠিক করে এ বাড়ির অস্তিত্বই রাখবে না, যাতে করে আর এ বাড়িতে না আসতে পারে তার পরিবার। এসপি জানান, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থান শনাক্ত করে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউসের পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টারের পর্দা ঘেরা টেবিলের নিচ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে জানায় প্রথমে শ্যালিকাকে গলা কেটে হত্যা করে পরে একে একে শ্যালিকার দুই সন্তানকে হত্যা করে। সবার শেষে নিজের প্রতিবন্ধী মেয়েকে সামনে পেয়ে তাকেও কুপিয়ে জখম করে দ্রæত পালিয়ে যায় সে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই পরের দিন ২০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার ) নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীমকে রাজধানীর নিকেতনের ১১৩ নম্বর বাসা থেকে ৬ দেহরক্ষীসহ আটক করা হয়। র‌্যাবের পরিচালক (গণমাধ্যম) লে কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম সাংবাদিকদের বলেন, যুবলীগের সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জি কে শামীমসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শামীমকে আটক করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত শামীমের বাবা সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন। সন্মানদী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল পাস করার পর তাঁদের গ্রামে দেখা যায়নি। ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বড় হয়েছেন। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রচারণাও চালিয়েছিলেন শামীম। তিনি সবসময় ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী প্রটেকশন নিয়ে চলতেন। সবার হাতেই থাকে শর্টগান। গায়ে বিশেষ সিকিউরিটির পোশাক। তাদের একেকজনের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। শামীম ছোটখাটো মানুষ হলেও তার ক্ষমতার দাপট আকাশসমান। এছাড়া শামীমের ব্যবসায়িক কার্যালয় জি কে বিল্ডার্সে অভিযান চালিয়ে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এ সময় নগদ দেড় কোটি টাকা, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কিছু মাদক ও বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকায় সন্ধান মিলে জঙ্গি আস্তানার। জঙ্গি সম্পৃক্ততার খবরে তিনজন আটক হয়। জঙ্গি আস্তানার সন্ধানের খবরে পুরো দেশের মানুষের দৃস্টি আবারো নারায়ণগঞ্জের দিকে। নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান এবং আটকের পুলিশের বিভিন্ন স্তরের র্মকর্তারা ছুটে আসেন নারায়ণগঞ্জে। মিডিয়ার বদৌলতে পুরো দেশবাসীর দৃস্টি থাকে নারায়ণগঞ্জের দিকে। এ ঘটনায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ডেটোনেটরসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার খামারবাড়ি, মালিবাগ, সায়েন্স ল্যাবে পুলিশের ওপর যে বোমা হামলা হয়েছিল, তার সঙ্গে এই জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকের মিল রয়েছে। সেগুলো ধ্বংস করার প্রক্রিয়া চলছে।’ সোমবার দুপুরে ফতুল্লার তক্কারমাঠ এলাকার ওই বাড়ি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্র্রিফিংকালে তিনি এসব বলেন।

মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘অন্যান্য জঙ্গি আস্তানায় যে ধরনের ল্যাব বা কারখানার সন্ধান মিলেছে সেগুলোর চেয়ে এটি ব্যতিক্রম। এখানে ডেটোনেটরসহ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। দুই ভাই এই আস্তানাটিতে বেশ কিছুদিন ধরে অবস্থান নিয়ে বিস্ফোরক তৈরি করছিল।’ ‘রবিবার রাতে ঢাকা থেকে মিজানুর রহমান ওরফে রফিককে আটক করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) জয়নাল আবেদিনের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে তার ভাই ফরিদ উদ্দিন রুমিকে আটক করা হয়। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফরিদের স্ত্রী জান্নাতুল ফোয়ারা অনুকে আটক করা হয়।’ আটক ফরিদ ও রফিক নব্য জেএমবির সদস্য বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন...

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

    © All rights reserved © 2023
    Design & Developed BY M Host BD