শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন

আবারো আসছে লকডাউন

ডেস্ক নিউজ: করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে অনেকদিন সাধারণ ছুটি রেখেছিল সরকার। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। জীবাণুটি ঠিকই সারাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে এবার আসছে লকডাউন। বিভিন্ন এলাকাকে রেড (লাল) কিংবা ইয়েলো (হলুদ) জোন নির্ধারণ করে লকডাউনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে বাংলা ট্রিবিউনকে জানানো হয়েছে, কোনও এলাকায় প্রতি এক লাখ বাসিন্দার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০-৪০ জন হলে সেই জায়গা রেড জোন হিসেবে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। এ সপ্তাহেই জোন ভাগের কাজ শেষের পর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন, জোন ভাগের খসড়া সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে দু’একদিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘অনেক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। জোন ভাগ করার বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু আমাদের কাছে এখনও আসেনি। গত সপ্তাহের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইসিটি মন্ত্রণালয় এখন ম্যাপ নির্ধারণে ব্যস্ত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা এতে যোগ দিয়েছেন। একইসঙ্গে সহযোগিতা করছে সিটি করপোরেশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দুই-একদিনের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে কাজটি শুরু হবে। এটি সফল হলে পরের সপ্তাহ থেকে সামগ্রিক পরিকল্পনা করে মাঠে নেমে পড়বেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশজুড়ে তা বাস্তবায়ন করতে একটু সময় লাগবে, কারণ এক্ষেত্রে রোগীর সংখ্যা কোথায় বেশি তা বের করতে হবে।

জোন ভাগ হবে যেভাবে: কোনও এলাকার বাসিন্দাদের প্রতি লাখে অন্তত ৩০-৪০ জন করোনা আক্রান্ত হলেই রেড জোন ঘোষণা করা হবে। রোগীর সংখ্যা এর কম থাকলে তা ইয়েলো জোন হিসেবে বিবেচিত হবে। দীর্ঘমেয়াদে ইয়েলো জোনকেও লকডাউনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল অবস্থা থাকবে। প্রয়োজনে কাগজ দেখিয়ে ইয়েলো জোন এলাকা থেকে বের হওয়া যাবে।

জোন ভাগের ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্তদের ফোন নম্বরের অবস্থান বিশেষ কাজে আসবে। সেই নম্বরের অবস্থান নির্ধারণ করে কোন এলাকায় কত রোগী তা সুনির্দিষ্টভাবে জানার কাজ করছে আইসিটি বিভাগ। তবে তা এখনও শেষ হয়নি। চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেলে এ সপ্তাহেই উদ্যোগটি কার্যকর করা যাবে বলে আশাবাদী স্বাস্থ্যবিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান মনে করেন, একটি ওয়ার্ড বা প্রয়োজনে তারও ছোট এলাকা লকডাউন হতে পারে।

জোনগুলোতে কোন পদ্ধতিতে কাজ করা হবে জানতে চাইলে অধিদফতরের এই কর্মকর্তার উত্তর, ‘রেড-ইয়েলো-গ্রিন জোন নাকি অন্য কোনও পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে সেই সম্পর্কিত নির্দেশনা পাইনি। ম্যাপ নির্ধারণের কাজ শেষে সেটি জানা যাবে।’

গত ১ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজটি প্রক্রিয়াধীন। আইসিটি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞরা মিলে প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সেটি পেলে এলাকা ধরে জোন ভাগের কাজ শুরু করবে। লকডাউন ঘোষণার কাজ সংশ্লিষ্ট এই তিন মন্ত্রণালয়ের যে কেউ ঘোষণা করতে পারে। সারাদেশে এটি প্রয়োগ করা হলে স্থানীয় প্রশাসনও লকডাউনের ঘোষণা দিতে পারবে।

জীবনযাপন হবে যেভাবে: সাধারণ ছুটির সময় দেখা গেছে, ঘর থেকে বের হতে বিভিন্নভাবে নিরুৎসাহিত করা হলেও কেনাকাটার জন্য বাইরে এসেছে মানুষ। ঘর থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে শপিং করার পরামর্শ দেওয়া হলেও তা মেনে চলেননি অনেকে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, কোনও এলাকায় কঠোর লকডাউন ঘোষণা করলে সেখানকার দৈনন্দিন জীবনযাপন কীভাবে হবে।

লকডাউন থাকা এলাকার জনসাধারণের প্রবেশ ও বহির্গমন বন্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য লকডাউন এলাকার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া হবে। ভ্যানে করে এলাকার ভেতরেই সেগুলো কেনাবেচা হবে। নিম্ন-আয়ের মানুষদের জন্য সরকারি সহায়তা থাকবে।

করোনা আক্রান্তের ক্ষেত্রে কী হবে: লকডাউন এলাকার কেউ করোনা আক্রান্ত হলে বাসায় আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে। সরকারিভাবে তাদের মনিটরিং চলবে। আত্মীয়স্বজনের গতিবিধি খেয়াল রেখে তাদের পরামর্শ দেবেন সংশ্লিষ্টরা। রোগীর শারীরিক অবস্থা বেশি নাজুক হলে তাকে এলাকার বাইরে আনা হবে।

কেন এই সিদ্ধান্ত: প্রতিদিন মৃত্যুসংখ্যা গড়ে ৩০ জনের কাছাকাছি থাকায় নতুন এই পদ্ধতি চলতি সপ্তাহেই শুরু হতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমে ঢাকায় পরীক্ষামূলকভাবে এটি করা হলেও পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। এরপর সরকার ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। দীর্ঘ ৬৬ দিনের এই ছুটিতে লকডাউন ব্যবস্থা না থাকায় সংক্রমণ বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এরপরই আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে জোন ভাগ করে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সবশেষ ৬ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজার ২৬ জন শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৩২৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ৭ হাজার ১৬২ জন।

নিউজটি শেয়ার করুন...

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

    © All rights reserved © 2023
    Design & Developed BY M Host BD