সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন

স্বামীর লাশের পাশে ইয়াবা সেবন!

 

নারায়ণগঞ্জের খবরঃ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নয়ন হত্যা মামলায় নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ও তার মেয়ে সুমনা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্ননা করেছেন হত্যাকান্ডের মূল ঘটনা সহ জড়িতদের নাম এবং লাশ গুম করার চেস্টার কথা।

 

পুলিশ জানিয়েছে পরকিয়া প্রেমিক কে সাথে নিয়ে স্বামী নয়ন কে হত্যার পর লাশের পাশে বসেই পরকিয়া প্রেমিক সহ তিনজন মিলে ইয়াবা সেবন করে লাশটি দিখন্ড করে এমনটাই ভয়ংকর তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের তদন্তে। হত্যাকান্ডে উঠে আসা জড়িত অপর আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ জোড় তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়নগঞ্জ কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক আতাউর রহমান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসির আরাফাতের আদালতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেন নিহত নয়নের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা এবং তার অপর এক মেয়ে সুমনা ।

পুলিশের বরাতে জানা যায়,নিহত নয়ন তিন বছর কারাগারে থাকাকালীন সময়ে সাবিনার সাথে পরকিয়ার সম্পর্ক হয় গ্রেফতারকৃত রাসেল ওরফে ঠোঙ্গা রাসেলের। ঠোঙ্গা রাসেল ও সাবিনা একসাথেই ইয়াবা সেবন করতো। নয়ন কারাগার থেকে বেরিয়ে বিষয়টি জানতে পারে। এ নিয়ে নয়ন এবং সাবিনার মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া হয়। ৫ সেপ্টেম্বর রোববার বেলা ১১ টার দিকে সাবিনার মোবাইলে ঠোঙ্গা রাসেল ফোন দিলে তা দেখে ফেলে নিহত নয়ন। এ নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সাবিনা কে মারধর করে সাবিনার মোবাইল ফোন ভেঙ্গে ফেলে। এর আগে সাবিনা অপর এক মোবাইল ফোন দিয়ে রাসেল কে ২-৩ টার দিকে বাসায় আসতে বলে। নয়ন ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গেইটের সামনে দেখা হয় রাসেলের সাথে। এতে করে আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে পরে নয়ন। তখন তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হলে রাসেল ও সাবিনা দরজার বাইরে থেকে নয়নকে ফ্লাটের একটি রুমের ভিতরে টেনে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে রুমের ভিতরে থাকা কালো রংয়ের হাতলযুক্ত স্টিলের লাঠি দিয়ে নয়নের মাথায় একাধিক আঘাত করে। এতে নয়ন ফ্লোরে পরে গিয়ে অচেতন হয়ে যায়। তখন তারা ঘরে থাকা একটি সুইচ গিয়ার ও চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। এ সময় সাবিমার প্রথম স্বামীর ঘরের দুই মেয়ে সুমনা ও সানজিদা পাশের রুমেই ছিলো।
পরে তারা সেই রুম থেকে সন্ধ্যার পর বের হয়। সাবিনা তার বড় মেয়ে সুমনা কে নানির বাসায় এবং অপর মেয়ে সানিজদা কে এক পরিচিতজনের বাসায় রেখে আসে। রাতের এক সময় সাবিনা ও ঠোঙ্গা রাসেল রুমে ফিরে এসে আবার বের হয়ে চলে যায়। সারারাত তারা রাস্তায় ঘুরাফেরা করে। সারাদিন অতিবাহিত হলে সন্ধ্যার দিকে ঠোঙ্গা রাসেল তার পরিচিত চয়নের শরনাপন্ন হয়ে বিস্তারিত খুলে বলে। চয়ন তখন রাসেলকে আশ্বস্ত করে যে লাশ গুম করার ব্যবস্থা করে ফেলবে। তখন তারা ঘটনাস্থল পাগলা দেলপাড়াস্থ সাবিনার ফ্লাটে যায়। সেখানে সবকিছু দেখে তারা আবারো বাইরে যায়। বাইরে এসে দোকান থেকে একটি হেক্সো ব্লেড ,কস্টেপ ক্রয়ের পাশাপাশি ইয়াবা ক্রয় করে ফ্লাটে যায়। সেখানে গিয়ে সাবিনা তার পরিকিয়া প্রেমিক ঠোঙ্গা রাসেল ও চয়ন এক সাথে ১০-১৫ টি ইয়াবা সেবন করে। ইয়াবা সেবন শেষে হেক্সো ব্লেড দিয়ে প্রথমে পা দুটি বিচ্ছিন্ন করে তারপর শরীরের অংশটুকু নীল রংয়ের ড্রামে ভরে। এবং পা দুটো প্লাস্টিক দিয়ে কস্টেপ মেরে তোষকের ভিতরে দিয়ে প্যাকেট করে। ড্রামে ভরা লাশ ফেলতে তারা জালকুড়ি এলাকা থেকে একটি অটোরিক্সা ভাড়া নেয়। সেই রিক্সায় করেই দেলপাড়াস্থ বাসা থেকে লাশটি দক্ষিন শিয়াচর মাওয়া মার্কেটের পেছনে ফেলে রাখে। তবে এ সময় পেছন থেকে কৌশলে সটকে পরে চয়ন। মঙ্গলবার দুপুরে তোষকে মোড়ানো বিছিন্ন দুটি পা নোমান,চয়ন ও সামির দেলপাড়াস্থ বাসা থেকে নিয়ে এসে পিলকুনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিপরীত গলিতে হিটলারের বাড়ীর সামনে ফেলে রেখে যায়।

উল্লেখ্য যে,মঙ্গলবার দুপুরে ফতুল্লার শিয়াচর তক্কার মাঠ-নন্দলালপুর সড়কের দক্ষিন পাশে মাওয়া মার্কেটের পিছনের ঝোপপ ড্রামে থাকা দু পা বিচ্ছিন্ন একটি লাশ উদ্বার করে পুলিশ। পরে ফিঙ্গারের মাধ্যমে পুলিশের অজ্ঞাত লাশটির পরিচয় পায়। পরিচয়ের কয়েকঘন্টার ব্যবধানে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সহ জড়িত ৭ আসামীকে গ্রেফতার করে।

নিউজটি শেয়ার করুন...

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

    © All rights reserved © 2023
    Design & Developed BY M Host BD