নারায়ণগঞ্জের খবর: আজ নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানায় ডিউটি চলাকালীন সময়ে ভোর ৫:১০ ঘটিকার সময় 999 থেকে একটি কল আসে। একজন বয়স্ক মহিলা বয়স প্রায় ৭৮ বছর এবং প্রায় অন্ধ। বৃদ্ধা মহিলা রুমের ভিতরে একা আছেন। তিনি ফোন তুলছেননা এবং দরজাও খুলছেননা,ডাকলে সাড়াও দিচ্ছেননা।তার এক মেয়ে চাদপুর থেকে ফোনে তার মাকে না পেয়ে 999 এ কল দেয়।
আমি মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলে লোকেশন জেনে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে ঘটনাস্থলে যাই। ৭ তলা ভবনের চতুর্থ তলায় থাকেন বৃদ্ধা মহিলাটি। আমি বাড়ির মালিক এবং গন্যমান্যদের সাথে নিয়ে মহিলার রুমের দরজার কাছে যাই। দরজা নক করলে প্রথমে কোনো জবাব না পাইলেও কিছুক্ষণ পর মৃদু শব্দ শুনতে পাই। মনে হচ্ছিল খুব কষ্ট হচ্ছে মহিলার। আমি স্থানীয়দের সহযোগিতায় দরজা ভেংগে দেখি বৃদ্ধা মহিলাটি মেঝেতে পরে আছে। ফোনটি বিছানার কোনায় মহিলার হাত থেকে মাত্র ২ হাত দূরে। বৃদ্ধা মহিলাটি সম্ভবত প্যারালাইসড। একবারেই নড়াচড়া করতে পারেননা তাই ২ হাত দূরে থাকা মোবাইলটি সারা রাত ধরে রিং হলেও রিসিভ করতে পারেন নাই।যাই হোক ভাল লাগলো এটা দেখে যে উনি বেচে আছেন। বৃদ্ধা মহিলা আমার সাথে কথা বলল।
আমি সান্তনা দিলাম যে উনার মেয়েরা আসতেছে।পরে জানতে পারি যে,এই মহিলা প্রাইমারী প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। বৃদ্ধা মহিলার ১ ছেলে ৩ মেয়ে। ছেলে কানাডা থাকে।এক মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায়। অন্য দুই মেয়ের এক মেয়ে ঢাকায় এবং অন্য মেয়ে চাদপুর থাকে যিনি ৯৯৯ এ কল দিয়েছিল। সবাই চাকুরী করে। বৃদ্ধা হাসবেন্ডকে নিয়ে এই ফ্ল্যাটে থাকেন। তিনিও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।তিনি এখন করোনা আক্রান্ত হয়ে সাজেদা হাসপাতালের বেডে।করোনা আক্রান্ত হাওয়ায় আশে পাশের লোকজনও বৃদ্ধাকে তেমন কোন সহযোগিতা করেনি। কেউ কাছে আসতে চায়না। আমি বৃদ্ধার রুমের ভিতরে গেলাম। মোবাইলটা উনার হাতে দিলাম।মহিলা উনার ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলল।রুমের ফ্যানটা চালু করলাম। পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলাম। জানতে চাইলাম কিছু খাবেন কিনা বা কিছু লাগবে কিনা উনি ঈশারায় না করলেন। কেউ কাছে না গেলেও আমিতো না যেয়ে পারবনা কারন আমি যে পুলিশ এবং মায়ের সন্তান। সকল মা ই যে আমার নিজের মায়ের মতোই যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে সন্তানদের মানুষ করেন ।আমার মা কাছে নাই তো কি হয়েছে,একজন মায়ের একটু প্রশান্তির কারন হয়েছি এটাই আজকের দিনে আমার জন্য উপহার।
( ফতুল্লা থানার এস,আই মামুন মিয়ার ফেইসবুক থেকে সংগৃহিত)
Leave a Reply