বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৬ অপরাহ্ন
নারায়ণগঞ্জের খবরঃ নারায়ণগঞ্জে কথিত সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। নিজেকে সাংবাদিক পচিয় দিয়ে সামাজের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে নানা ভাবে হয়রানী করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কথিত সাংবাদিকদের ভীরে প্রকৃত সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময়ে হয়রানী হয়ে থাকে। অনেকে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা ভাবে নাজেহাল হচ্ছে। হামলার-মামলা কিংবা হুমকীর শিকার হচ্ছে অনেক পেশাদার সাংবাদিক। এদিকে কথিত কিংবা নামধারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন মাঠে নেমেছে। এসব নামধারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কঠোর হুশিয়ারির পর এবার গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কিছু নামধারী সাংবাদিক জেলার বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজীসহ নানা ধরনের অপকর্ম করে আসছে। এ নিয়ে পেশাদার সাংবাদিকরা নিজ নিজ পেশার সঠিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিব্রত হচ্ছে। আর এসব বিষয় নিয়ে জেলার আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে বার বার এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতারা। কিন্তু বরাবরই এ বিষয়টি উপেক্ষিত থাকলেও, বতর্মান এসপি হারুন অর রশিদ নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর থেকে সন্ত্রাস,জুয়া,মাদক ও ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি কথিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। এ নিয়ে পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও দাবি উঠেছে এসব কথিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার বিষয়ে।
অপরদিকে, নামধারী সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নিতে প্রশাসনের তৎপরতার শুরুতে গত সপ্তাহে ফতুল্লায় থেকে গেস্খফতার হয় কথিত সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন শুভ। শুভ নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানী করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত রোবাবার দুপুরে ফতুল্লার ভূইঁগড় রধুনাথপুরে চাঁদাবাজী করতে গিয়ে পুলিশের জালে আটক হয়েছে ৫ ভূয়া সাংবাদিক। গ্রফতারকৃতরা হলো বন্দরের আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে রুহুল আমীন(৪৮), ইসদাইর বুড়ির দোকান এলাকার সিদ্ধিক মিয়ার পুত্র শরীফ মোঃ সিদ্দিকী ওরুফে আপন(৪০), একই এলাকার আবদুল লতিফের পুত্র মোঃ বাবু সওদাগর(৪৫), পঞ্চবটি চাঁদনী হাউজিংয়ের মৃত হায়দার খানের পুত্র সাইফুল ইসলাম(৩২) এবং বন্দর নবীগঞ্জের শাহ জালালের পুত্র ফয়সাল(৩২)। এদের মধ্যে রুহুল আমীন বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিলসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা বাড়িতে প্রবেশ করে নানা অভিযোগ এনে ভয়ভিতি দেখিয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়। এমন একটি অভিযোগ পেয়ে রোববার দুপুরে ফতুল্লার ভূইঁগড় রঘুনাথপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫জনতক গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক দূর্নীতির রিপোর্ট নামক একটি অখ্যাত পত্রিকার আইডি কার্ডসহ বেশ কয়েটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা তিতাস গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন নারায়ণগঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং গ্যাসের সংযোগ সহ চুলা দেখিতে চায়। তখন তিনি আসামীদের নিকট পরিচয়পত্র দেখিতে চাহিলে আসামীগন পরিচয়পত্র না দেখাইয়া বলে যে, “আপনার গ্যাস সংযোগটি অবৈধ, গ্যাসের সংযোগটি আমরা বন্ধ করে দিব, যদি সংযোগটি চালু রাখতে চান তা হইলে ৫০,০০০/- টাকা প্রদান করতে হবে”। তখন সুপ্রিয়া বেগমের আসামীদের প্রতি সন্দেহ হইলে তাহার ভাই গোলাম মেহেদী হাসান তুহিনকে (৪২) সংবাদ দেয়। গোলাম মেহেদী হাসান তুহিন ঘটনাস্থলে আসিয়া আসামীদের দেখিয়া আসামীদের নিকট পরিচয়পত্র চাহিলে তাহারা পরিচয়পত্র না দেখাইয়া তাহার সাথে তর্ক-বিতর্ক করিতে থাকে। আসামীগন গোলাম মেহেদী হাসান তুহিন এই বলিয়া হুমকি দেয় যে, “গ্যাস সংযোগটি অবৈধ, গ্যাস সংযোগটি চালু রাখতে হলে ৫০,০০০/- টাকা চাঁদা দিতে হবে, বেশী বারাবারি করলে মামলা দিব”। তখন গোলাম মেহেদী হাসান তুহিনের আসামীদের আচরনে সন্দেহ হয় এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাহাদের আটক করিয়া ফতুল্লা থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পরবর্তীতে ফতুল্লা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছাইয়া আসামীদের ধৃত করেন। সংক্রান্ত গোলাম মেহেদী হাসান তুহিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, পুলিশ পরিদর্শেকর নিকট চাঁদা দাবীর অভিযোগে কথিত চার ভূয়া সাংবাদিককে রবিবার রাতে গ্রেফতার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো কুমিল্লার আঃ মান্নান মিয়ার পুত্র মাসুদ মিয়া (৩৫),ফতুল্লা থানার পাগলা নুরবাগ এলাকার আবেদ আলীর পুত্র ইউসুফ(২১),ময়মনসিংহ সদর থানার রাজকাঠি গ্রামের তাহের মিয়ার পুত্র শফিকুল ইসলাম(৩৮),কুমিল্লার লাকসাম থানার মান্নান মিয়ার পুত্র সেলিম নিজামী(৩৭)।
এ সময় তাদের নিকট থেকে মোবাইল ফোন ও একটি ভিডিও ক্যামেরা সহ ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-১৬১০ নম্বরের একটি নোয়া গাড়ী জব্দ করে। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় গ্রেফতারকৃতরা নিজেদেরকে দৈনিক গণজাগরন ও অপরাধের খোঁজে পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক আজিজুল হকের নিকট থেকে প্রতি মাসে বিশ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে।
চাঁদা না দিলে গ্রেফতারকৃতরা তাদের পত্রিকার মাধ্যমে পুলিশের বিরুদ্ধে লেখালেখি করার হুমকী প্রদান করে। এসময় তারা গোপনে ভিডিও ধারন সহ কথকপোনের রেকডিং করার চেস্টা করে । এক পর্যায়ে পুলিশ পরিদর্শক আজিজুল হকের সন্দেহ হলে তাদের পরিচয় পত্র দেখাতে বললে তারা পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি।
এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা নিজেদেরকে ভুয়া সাংবাদিক হিসেবে স্বীকার করে। অভিযুক্তরা তাদের গাড়ীর গায়ে অপরাধের খোজে স্টিকার লাগিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অভিনব কৌশলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদা আদায়সহ নানা অপরাধের কথা স্বীকার করে।
Leave a Reply