June 1, 2023, 4:45 am

র‌্যাবের জালে নারী পাচারকারী ৬ সদস্য আটক

নারায়ণগঞ্জের খবরঃ নারায়ণগঞ্জে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার এবং তাদের কবল থেকে ৪ তরুণীকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১১। গত শনিবার রাতে রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় নগদ টাকা, পাসপোর্ট, বিমানের টিকেট জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ছয়জনের মধ্যে দুইজন তরুণী সংগ্রহের এজেন্ট, একজন পাসপোর্ট প্রস্তুতকারী দালাল, দুইজন দুবাইয়ে ড্যান্স ক্লাবের মালিক এবং আরেকজন ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। রোববার দুপুরে র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃতরা ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ময়মনসিংহ জেলার ধুপাউড়া থানার বাসিন্দা অনিক হোসেন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আক্তার হোসেন (তরুণী সংগ্রহকারী এজেন্ট), চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার আফতাউল ইসলাম ওরফে পারভেজ (পাসপোর্ট প্রস্তুতকারী দালাল), নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার বাসিন্দা মনির হোসেন ওরফে সোহাগ (দুবাইয়ের ড্যান্স ক্লাবের মালিক) ও কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার বাসিন্দা আব্দুল হান্নান (দুবাইয়ের ড্যান্স ক্লাবের মালিক)। পরে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ঢাকার খিলগাঁওয়ের গোড়ান এলাকা অভিযান পরিচালনা করে মাদারীপুর জেলার সদর থানার বাসিন্দা মো. আকাশকে (ট্রাভেল এজেন্সির মালিক) গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের হেফাজত থেকে ৭০টি পাসপোর্ট, নগদ এক লাখ ৫৮ হাজার টাকা, ২০০টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমান টিকেট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর ও ১টি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। এ সময় তাদের হেফাজত হতে ৪ জন ভিকটিম তরুণীকে উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত চক্রটি ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী সুন্দরী তরুণীদের উচ্চ বেতনে বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে থাকে। এই পাচারকারী সিন্ডিকেটের সাথে বিপুল সংখ্যক এজেন্ট, পাসপোর্টের দালাল, ড্যা›স বারের মালিক, ট্র্যাভেল এজেন্সসী ও অসাধু ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে। এই নারী পাচারকারী সিন্ডিকেটের এজেন্টরা নিম্নবিত্ত পরিবারের, পোশাক শিল্পের, ব্রোকেন ফ্যামিলির সুন্দরী তরুণীদের প্রাথমিকভাবে টার্গেট করে থাকে। টার্গেট করার পর প্রথমে তরুণীদের ছবি বিদেশে অবস্থিত ড্যান্স বারের মালিককে পাঠানো হয়। ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ড্যান্সস বারের মালিক অথবা তার প্রেরিত প্রতিনিধি সরাসরি উক্ত তরুণীদেরকে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে ঢাকা অথবা আশপাশের কোন রেস্টুরেন্ট, হোটেল অথবা লং ড্রাইভের নামে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাসে সাক্ষাৎ করে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত তরুণীদের পাসপোর্ট উক্ত নারী পাচারকারী সিন্ডিকেট তাদের নিজস্ব পাসপোর্ট দালালের মাধ্যমে প্রস্তুুত করে থাকে। ট্রাভেল এজেন্সসীর মালিকের মাধ্যমে নথিপত্র ম্যানেজ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে এই সকল তরুণীকে মধ্যপাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরোও জানা যায়, এই সকল তরুণী বিদেশে পৌঁছামাত্র এয়ারপোর্ট থেকে উক্ত সিন্ডিকেটের সদস্যরা রিসিভ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখত। বিদেশে অবস্থানকালীন এই সকল তরুণীকে কোন অবস্থাতেই নিজের ইচ্ছায় হোটেল তথা ড্যান্স বারের বাইরে যেতে দেওয়া হয় না। প্রাথমিক অবস্থায় তরুণীরা এসব আসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতে রাজি না হলে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করা হয়ে থাকত। এভাবে দিনের পর দিন উক্ত তরুণীদের উপর পৈশাচিক নির্যাতন চলতে থাকে। কোন খদ্দরের কোন নির্দিষ্ট তরুণীকে পছন্দ হলে উক্ত ড্যান্স বারের মালিকের নিকট হতে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকে।

এই মানব পাচার চক্রের উপর দীর্ঘদিন যাবত র‌্যাব-১১ গোয়েন্দা নজরদারী চালিয়ে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-১১ এর এক বিশেষ অভিযানে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো মোড়ের শাহ চন্দপুরী রেস্টুরেন্টে ৪ জন তরুণীকে পাচারের উদ্দেশ্যে একত্রিত করা অবস্থায় পাচারকারী চক্রের সদস্য ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন...

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

    © All rights reserved © 2023
    Design & Developed BY N Host BD