বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৮:২৩ অপরাহ্ন
নারায়ণগঞ্জের খবরঃ “আমরা করব জয়, আমরা করব জয় আমরা করব জয় নিশ্চয় আহা বুকের গভীরে, আছে প্রত্যয় আমরা করব জয় নিশ্চয়” অটিজম কোনো মানসিকরোগ নয়,মস্তিষ্কের একটি বিকাশগত সমস্যা যেটা একটা শিশুর তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। অটিজম সমস্যায় আক্রান্তদের বলা হয় অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। অটিজম সম্পর্কে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে স্বাস্থ্য সচেতনতা তেমন নেই বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়েথাকা দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের প্রতি অভিভাবক ও সমাজ হয়ে ওঠে বৈরি। অনাদরঅবহেলায় বড় হয়ে ওঠে তারা পরিণত হয় সমাজের বোঝা হিসেবে।প্রতিবন্ধিতার কারণে কোন শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রাখা যাবে না।
সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে যেভাবে শিশুদের শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে তা থেকে একেবারেই ভিন্ন ধরনের শিখন পদ্ধতি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্ষেত্রে । চাপ দিয়ে শেখানো বা পড়তে বা বলতে বাধ্য করানো বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সঙ্গে একেবারেই যায় না। সাধারণ শিশুদের বুঝিয়ে পড়ানোর যে সুযোগ থাকে বিশেষ শিশুদের ক্ষেত্রেসেটাও নেই। এসব শিশুর বেশিরভাগই আপন খেয়ালে থাকে। তাদের বেশিরভাগই সেনসরি জনিতবিভিন্ন সমস্যায় ভোগে, অন্য কারওসঙ্গে দৃষ্টি বিনিময়ও (আই কন্টাক্ট) করতে পারে না। এমন শিশুদের কিভাবে কিছুশে খাবেন, খাওয়াবেন, কিছু বলবেন তা নিয়ে তাদের অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন থাকেন। কারণ, যথাযথকৌশল না জানলে তাদের উন্নতি ঘটানো অত্যন্ত কঠিন। নারায়ণগঞ্জ সদরউপজেলাধীন ১২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২১৫ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু রয়েছে। এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের খেলাধুলা এবং বিনোদনের উদ্দেশ্যে উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা, নারায়ণগঞ্জ সদর এর পরিকল্পনায় উপজেলা পরিষদে “আমরা করব জয়” (Children with differently able,not disable) কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। সোমবার নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলাধীন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে “আমরা করব জয়” কর্ণার উদ্বোধন করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা “আমরা করব জয়” কর্ণারে এসে খেলাধুলা এবং বিনোদনের সুযোগ পাবে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থাপিত উক্ত কর্ণারের মাধ্যমে শিশুরা খেলাধুলা,ব্যায়াম, মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ পাবে। “আমরা করবজয়” কর্ণারে টিভি, ট্রেড মিল, ব্যায়ামের সাইকেল, হারমোনিয়াম, তবলা, পাজল গেম,ইন্টারনেট, ব্লক গেম ইত্যাদি খেলাধুলা ও বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। এ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্র কে. এম. আসিফ রহমত ঊল্লাহকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নারায়ণগঞ্জ সদর এর উদ্যোগে ১টি হুইল চেয়ার প্রদান করা হয়। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আরও ৫ জন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীকে হুইলচেয়ার প্রদান করা হয় এবং উপস্থিত সকল শিশুদের শিক্ষা উপকরণ এবং তাদের অভিভাবকদের “পুষ্টিবার্তা” বই এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের “মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাবাস্তবায়নে সুপারিশমালা” বই বিতরণ করা হয় । নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এই উদ্যোগটি অভিনব এবং প্রত্যেকটি উপজেলার জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অনুষ্ঠানে আগত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, ছাত্র, অভিভাবক এবং উপজেলাপ্রশাসনের সকল কর্মকর্তা তাদের প্রফুল্লতা ব্যক্ত করেছেন উপজেলা প্রশাসনের এইউদ্যোগে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদরউপজেলার সকল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থার জন্য একটি পার্কনির্মাণের কার্যক্রম পরিকল্পনাধীন রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গৃহীত এসবপদক্ষেপের মাধ্যমে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়িতহবে এবং তারা পরিবারের বোঝা নয় বরং সম্পদে পরিণত হয়ে দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নতরাষ্ট্রে পরিণত করার প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণের হাতিয়ার হবে।
Leave a Reply