আবদুর রহিমঃ
চলছে নারায়ণগঞ্জে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। প্রথম ধাপে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে ২টিতে নির্বাচন হওয়ার কতা থাকলেও সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় শুধু মাত্র বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ।
মঙ্গলবার প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে সকল নির্বাচনী সামগ্রী (ব্যালট ছাড়া) নিয়ে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কাজী মো. ইস্তাফিজুল হক আকন্দ।
তবে এবারের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের চার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করেছে বন্দর উপজেলায়। নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে এ উপজেলায় একাধিক স্থানে মারামারি ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া প্রতিপক্ষের লোকজনকে তুলে নিয়ে শাসানোর অভিযোগ উঠেছে। যা নিবার্চন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন অবগত রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই প্রশাসন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভোটগ্রহণের দিন এসব কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আমীর খসরু।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। কোনো প্রকার সহিংসতা বা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ভোটের দিনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশের পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন থাকবে। অতিগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত কেন্দ্রগুলোতে আলাদা নজরদারি থাকবে।
অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বিন্দুমাত্র কাউকে ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন এবং জেলা প্রশাসন। উপজেলা জুড়ে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছেন।
বন্দর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রিয়াজ আহমেদ বলেন, অবাধ সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ব্যালট পেপার বাদে সব সরঞ্জাম নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসাররা নিজ নিজ কেন্দ্রে চলে যাচ্ছে। সাথে রয়েছে আনসার, পুলিশ। নিরাপত্তার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, পর্যাপ্তের তুলনায় এবার আমরা অনেক বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি। বলা যায়, প্রায় দ্বিগুণ পরিমানে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করেছি, যাতে নির্বাচনে কোন অসুবিধা না হয়। নির্বাচনের দিন র্যাব, পুলিশ এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হবে। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিক নির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনী অপরাধসমূহ আমলে নিয়ে দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত বিচারের জন্য একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, বন্দরে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে প্রশাসনিক পর্যায়ে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। প্রতিটি ইউনিয়নে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন এবং পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেও থাকবে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, যেভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ঠিক একই ভাবে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হবে। কোন পুলিশ সদস্য যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায় জন্য কোন কিছু করতে যায় এবং সেটা যদি আমরা ধরতে পারি তাহলে তার চাকরি থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে কেউ যেন হাঙ্গামা তৈরী করতে না পারে। নির্বাচন উপলক্ষে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমানে মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। কোন সমস্যা হলেই পুলিশ সদস্যরা সেই টিমকে জানাবেন এবং স্ট্রাইকিং টিম সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবে। সমগ্র নির্বাচনী এলাকায় মোট ১৮ টি মোবাইল টিম ও স্টাইকিং টিম থাকবে। এখানে ম্যাজিস্ট্রেট টিম ও র্যাব ও থাকবে। এটা আমাদের কমিটমেন্ট থাকবে যে কিন্তু কোথাও কারো ব্যক্তিগত কারণে আমাদের জেলা পুলিশের ইমেজ যেন নষ্ট না হয়। ভূত কক্ষে কোন পুলিশ কোন ধরনের কারো সহযোগিতা করতে যাবেন না। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট আছেন তারা ভোটারদের সুবিধা অসুবিধা দেখবেন। আমরা শতভাগ সুষ্ঠ, সুন্দর ও শান্ত পরিবেশে নির্বাচনটি সম্পন্ন করবো।
বন্দর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ রসিদ (দোয়াত কলম), উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুল (চিংড়ি মাছ), জাতীয় পার্টির বহিস্কৃত নেতা মাকসুদ হোসেন (আনারস) ও তার ছেলে মাহমুদুল হাসান (হেলিকপ্টার) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন।
নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে, বন্দর উপজেলায় ৫৪টি কেন্দ্রের ৩৫৭টি বুথে ভোট প্রদান করবেন উপজেলার ১লাখ ৩১হাজার ৫৬৪জন ভোটার। ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন ১১২৫ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা।
Leave a Reply