রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন

ঢাকার প্রিয়ময়ার লীগের ফুটবলার  এখন ৪’শ টাকার জোগালি

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ঢাকার প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলার এখন ৪০০ টাকার  জোগালি।খাঁটি বাংলায় যাকে বলে রাজমিস্ত্রি। যে লিগে কোটি টাকার দলবদল হয়, সেখানে খেলা ফুটবলার আবার জোগালি হতে যাবে কেন। আরিফ হাওলাদারের ক্ষেত্রে এমনটাই হয়েছে। করোনার কারণে আয়-রোজগার বন্ধ। বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচ সেই সঙ্গে নিত্যদিনের ব্যয়।
সব মিলে দিশেহারা আরিফ উপায়ন্ত না দেখে  রাজমিস্ত্রির কাজ বেছে নিয়েছেন। গত দেড় মাস ধরে জোগালির কাজ করছেন তিনি। মাথায় করে ইট-বালু-সিমেন্টের বোঝা টানছেন, লোহা পেটাচ্ছেন। কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত পেয়েছেন। অসুস্থ শরীর নিয়েও কাজ করে গেছেন। নিয়মিত করে চলেছেন।
ঢাকার ক্লাব ফুটবলে পরিচিত মুখ আরিফ হাওলাদার। নারায়ণগঞ্জের এ ফুটবলার দীর্ঘদিন ধরেই ফুটবল খেলছেন। ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর প্রিমিয়ার লিগেও খেলেছেন। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, টিম বিজেএমসি সবশেষ ২০১৭-১৮ মৌসুমে ছিলেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে। এর পরের বছর পেশাদার লিগের সর্বোচ্চ আসরে দল না পেয়ে চলে আসেন লিগের দ্বিতীয়স্তর চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে।
২০১৮-১৯ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দল অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে খেলা আরিফ সবশেষ বাতিল হওয়া ২০১৯-২০ মৌসুমে কোনো দল পাননি। এতদিন ধরে ফুটবল খেললেও আর্থিক অবস্থা ভালো নয় আরিফের। বাবা-মায়ের চিকিৎসা, ছোট ভাইয়ের দেখভাল সহ নিজের খরচ তো রয়েছেই। মরার ওপর খরার ঘা করোনার প্রাদুর্ভাব। এতদিন ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে জোগালির কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নিজেকে লুকিয়ে রাখেননি।
আরিফের বাবা স্ট্রোক করে বিছানায়। সপ্তাহ না পেরুতেই ওষুধের পেছনে ১০ হাজার খরচ। এর ওপর মায়ের চোখের সমস্যা দিনকে দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। চোখের অপারেশন জরুরি হয়ে পড়েছে। ছোট ভাই ফুটবল খেললেও নিজেকে সেই পর্যায়ে এখনো নিয়ে যেতে পারেননি।
গত বছর দল না পাওয়াতেই মূলত সমস্যায় পড়ে গেছেন আরিফ। একটা মৌসুম ঘরে বসে কাটাতে হয়েছে। খেলতে পারেননি; তাই আয়ের পথও ছিল বন্ধ। করোনা আরিফের জীবন আরো দুর্বিষহ করে তুলেছে। আধপেটা খেয়ে এতদিন সংসার টেনে নিলেও একার পক্ষে স্বল্প আয়ে আর চলছে না তার।
মুখেই শুধু বড় বড় কথা বলেন বাফুফের কর্তারা। গেল ১২ বছরে মাঠে নিয়মিত লিগ রেখেছেন তারা। এখন খেলোয়াড়রা কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে। কারোর কোনো অভাব নেই। অথচ করোনাকালে দুস্থ-অভাবী খেলোয়াড়দের কোনো খোঁজই নেয়নি ফেডারেশন। দু’টাকা সাহায্য দেননি কাজী সালাউদ্দীনরা। দিলে আজ আরিফদের এমন দিন দেখতে হতো না।
লজ্জায় নিজেদের অভাব-দারিদ্র্যের কথা বলতে পারেন না আরিফরা। কিন্তু সমাজের উচ্চ পর্যায়ে যারা আছেন; ফুটবলকে যারা ভালোবাসেন, ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকতা করেন তাদের প্রতি অনুরোধ দয়া করে আরিফদের পাশে দাঁড়ান। একটু সহযোগিতার হাত প্রসারিত করুন
জোগালি নয়; আরিফের কাজ ফুটবল পায়ে মাঠে দৌড়ানো, অনুশীলনে ঘাম ঝরানো। যেভাবে আরিফকে দেখে অভ্যস্ত সবাই। আশাকরি শিগগিরই স্বরূপে ফিরবেন আরিফ।
নিউজটি শেয়ার করুন...

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

    © All rights reserved © 2023
    Design & Developed BY M Host BD