বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০২:১২ পূর্বাহ্ন

শারমিন আরা কেয়া’র ছোটগল্প ”জীবন যেখানে যেমন”

মর্জিনা বেগম অন্যের বাসাবাড়িতে ছুটা কাজ করে।কাকডাকা ভোরে বেলায় তিনি বের হন এবং ২/৩ বাসা কাজ শেষ হতে হতে বিকেল হয়ে যায়।তাকে অনেকে বাঁধা কাজে রাখতে চেয়েছিলো,কিন্তু তিনি থাকেননি তার পরিবারের কি হবে তাই ভেবে।দিনশেষে বাসায় ফিরে আবারও কাজ। স্বামী,সন্তান,শ্বাশুড়ির জন্য রান্নাবান্না,ঘরদোর পরিষ্কার করা।এত পরিশ্রম শেষে যখন মাসশেষে বেতন হাতে পান তার খুশি হবার কথা। কিন্তু তিনি হয়ে যান আতঙ্কিত।কারণ,বাসায় ঢোকার সাথে সাথে তার মাতাল স্বামী ছোঁ মেরে টাকাগুলো নিয়ে নিবে,এবং তিনি দিতে না চাইলে তাকে রক্তাক্ত হতে হবে।

রশিদ সাহেব মোটামুটি বেতনে একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করে। খুব স্বাচ্ছন্দে না থাকলেও মাসশেষে যা পান তাতে স্ত্রী,দুই সন্তান নিয়ে চলতে পারেন ভালোভাবেই।রশিদ সাহেবের স্ত্রীও উচ্চ ডিগ্রী ধারী,ভালো ফলাফলও করেছেন পড়াশোনায়।কিন্তু বাচ্চা কার কাছে রেখে চাকরী করবেন সেই ব্যবস্থা করতেও পারলেন না,চাকরীও করা হলো না।একটা সময় চাকরী করতেন তাই খরচের হাতটাও একটু বেড়ে গিয়েছে। সবই ঠিকঠাক চলছিলো।কিন্তু মাস শেষে স্বামীর কাছে টাকা চাইতে গেলেই শুরু হয় বিপত্তি।

শিক্ষিত রশিদ সাহেব শুনিয়ে দেন-“টাকা দিয়ে কি করবে?তোমার যা লাগে আমি তো এনে দিচ্ছি,মোবাইল খরচও শেষ হওয়ার আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছি। এরপর আরও টাকা কি কারণে লাগবে??থাকো তো আরামে বাসায়,উপার্জন করলে বুঝতে কত কষ্ট।” তেল,সাবান,শ্যাম্পু,জামাকাপড়,মোবাইল বিল ছাড়াও যে কারও টাকার প্রয়োজন হতে পারে,কারও ইচ্ছা হতে পারে বাবা,মাকে কিছু খাওয়ানোর,ছোট বোনকে একটা জামা কিনে দেয়ার সে বোধোদয় রশিদ সাহেবের হয়নি। উদয় সাহেব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বেতনের বাইরেও কত উপার্জন তার তিনি হয়ত নিজেও জানেননা।

ঢাকায় অনেকগুলো ফ্ল্যাটের মালিক,গাড়ির মডেল পাল্টান নিয়মকরে,মোবাইল থেকে শুরু করে সবধরণের গেজেটের নতুন নতুন মডেলের খোঁজখবর রাখাটাও তার অভ্যাস।স্ত্রী এবং এক কণ্যা নিয়ে তার সংসার।স্ত্রীর একাউন্টে না চাইতেও তিনি দিয়ে রাখেন মুঠো মুঠো টাকা।স্ত্রী শপিং করেন,পার্লারে যান,বাসায় আধডজন বুয়া আছে তার ফুটফরমাস শোনার,মেয়ে পড়ানোর শিক্ষক আছে।

কিন্তু সময় শুধু নেই উদয় সাহেবের। তিনি স্ত্রীর সাথে সময় কাটানোর চেয়ে বান্ধবীদের সাথে সময় কাটানোটা একটু বেশিই পছন্দ করেন।এবং যখনই তিনি উচ্চবাচ্য করতে যাবেন এই বিষয়ে,তাকে শুনতে হয়-“সবই তো পাচ্ছ না চাইতেও।কোন অপূর্ণতা তো আমি রাখিনি।”এক্ষেত্রেও বোধোদয় হয়নি যে এই উচ্চপদস্থ ব্যক্তিটির এই সবকিছুর মাঝেও একটা বড় ধরণের শূন্যস্হান রয়েছে।। উপরের ঘটনাগুলো সমাজের তিনশ্রেনির জীবনযাত্রা হলেও ঘুরেফিরে অত্যাচারিত নারীজাতিই।শুধু বদলেছে অত্যাচারের ধরণ,প্রেক্ষাপট।কিন্তু পুরুষকূল নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত যে পর্যায়েই থাকুক না কেন তারা কখনও রক্তাক্ত,ক্ষতবিক্ষত করছে দেহ;কখনও বা অন্তরআত্মা।এখন হয়তো সময় এসেছে এ ধারণা থেকে বের হয়ে আসার।

নিউজটি শেয়ার করুন...

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

    © All rights reserved © 2023
    Design & Developed BY M Host BD