নিজস্ব প্রতিবেদক : একটি মাত্র রাস্তার অভাবে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরা পাকিস্তান খাদবাসীর সহোযোগিতায় এগিয়ে আসছেনা কেউ।করোনা
ভাইরাসের কারণে বিপাকে পড়েছেন পাকিস্তান খাদের নিম্ন ও নিন্ম- মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। দিনের পর দিন চলা অঘোষিত লকডাউনের ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন তারা।
করোনাভাইরাসের কারণে নারায়নগঞ্জ জেলার সর্বত্র চলছে অঘোষিত লকডাউন। শুধু ওষুধের দোকান ব্যতিত দিনে কিছু সময়ের জন্য খোলা থাকছে নিত্যপণ্যের দোকান ও কাঁচা বাজার। সামাজিক দূরত্ব বন্ধ রয়েছে শ্রমজীবী মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন পাকিস্তান খাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষেরা।
স্থানীয় যুবক জুয়েল রানা বলেন,পাকিস্তান খাদ এলাকা ফতুল্লা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের অন্তভুক্ত। ৪ নং ওয়ার্ডের সংযুক্ত একমাত্র প্রধান রাস্তাটি ভূমীদস্যুদের কবলে পরে বিলীন হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই তাদের কে পাশ্ববর্তী ৫নং ওয়ার্ড এলাকার সকল কিছুর উপর নির্ভর করতে হয়।তিনি আরো বলেন,প্রায় হাজার পরিবারের বসবাস পাকিস্তান খাদ এলাকায়।যার সিংহভাগই একেবার নিন্ম আয়ের খেটে খাওয়া সাধারন দিনমজুর।লক ডাউনের কারনে এ সকল অভাবী মানুষের তিন বেলা খাওয়া তো দুরের কথা দু বেলাই ঠিক মতো তারা খেতে পায়না।তবে গত কয়েকদিন পূর্বে ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপনের পক্ষ থেকে পাকিস্তান খাদ এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবারকে ত্রাণ দেওয়া হয়।যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই সামান্য ছিলো।
পাকিস্তান খাদ এলাকার ভ্যান গাড়ি চালক শহিদ জানায়,চার সদস্যের সংসার তার।তার উপার্জনেই চলে তার সংসার। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে এক মাসের ও বেশী সময় ধরে তিনি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতে পারছেন না।মাঝে দু- চারদিন ভ্যান গাড়ি নিয়ে নামলে ও বিভিন্ন ডাইং কারখানা বন্ধ থাকায় খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাকে।মাঝে একদিন মাত্র ৪০০ টাকা উপার্জন করেছিলেন।তাই দিয়ে আলু, চাউল আর ডাল কিনে বাসায় নিয়ে যান তিনি।সেই কেনা চাউল, ডাল,আলু প্রায় শেষ।এখন না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে।সরকারী বা বেসরকারী কোনো প্রকার ত্রান জোটেনি তাদের ভাগ্যে।
মানুষের বাসায় কাজ করে তিন সদস্যের সংসার চালানো রহিমা বেগম জানান,করোনার কারনে যে বাসায় কাজ করতেন সে বাসার মালিক গত এক মাস পূর্বে বেতন দিয়ে কাজ করতে আসতে নিষেধ করে দিয়েছে।তবে মাস শেষে এসে বেতন নিয়ে যেতে বলেছে।তিনি জানান, যে বাসায় কাজ করতেন বাড়ীর মালিক প্রতিদিনই তার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য খাবার দিয়ে দিতেন।এখন সে খাবার না পাওয়ায় ছেলে মেয়ে নিয়ে তাকে অনেকটাই না খেয়ে দিন-যাপন করতে হচ্ছে।তাদের ভাগ্যেও মিলেনি কোনো প্রকার ত্রাণ।
রুপা নামক এক কিশোরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন তার বাবা একজন ভ্যান গাড়ি চালক।করেনার কারনে তার বাবা কাজে যেতে পারছেনা।আর তাই অনেকটা না খেয়েই দিন চলছিলো তাদের।তিন-চার দিন পূর্বে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাদের জন্য কিছু ত্রাণ পাঠিয়েছে। তাই আজ কয়েকদিন ধরে পেট ভরে খেতে পারছে তারা।
কথা হয় স্থানীয় অপর এক যুবক মামুনের সাথে,তিনি বেশ আক্ষেপের সুরে বলেন,পাকিস্তান খাদ বাসী সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।রাজনৈতিক নেতার শুধু মিছিল- মিটিংয়ের সময় পাকিস্তান খাদ বাসীকে ব্যবহার করে আর জন প্রতিনিধিরা ভোটের সময় পাকিস্তান খাদে এসে নানা প্রতিশ্রুতির বানী শুনিয়ে যায়।শুধু মাত্র পাকিস্তান খাদে বসবাসকারী ২৬০০ ভোটারের আশায় ছুটে আসে জনপ্রতিনিধিরা।কিন্তু বাস্তবতা হলো দেশের এই চরম সংকটময় মূহুর্তে না কোনো নেতা না কোনো জনপ্রতিনিধি পাকিস্তান খাদ বাসীর জন্য আর্শীবাদ হয়ে ত্রাণ নিয়ে আসেনি। তিনি আরো বলেন পাকিস্তান খাদের অধিকাংশ পরিবারগুলো অর্ধাহারে- অনাহারে দিনযাপন করছে।অনেক পরিবারের সদস্যরা হয়তো ভুলেই গেছেন তিন বেলা পেট ভরে শেষ কবে খেয়েছেন।
Leave a Reply