March 19, 2024, 4:46 am

শারমিন আরা কেয়ার ছোট গল্প ‘পাহাড়ি বরফ’

এই পাহাড়ি বরফ পাহাড়ি বরফ

৫ বছরের অন্তু বরফের কেস নিয়ে এক নাগাড়ে বলেই চলেছে শব্দগুলো।কি সুন্দর ওর মায়াভরা মুখ আর মায়াকাড়া বাচনভঙ্গী।দাদী জহুরা বেগম থমকে গেলেন এ শব্দ তিনটে শুনে।ধীর পায়ে এগিয়ে আসলেন নাতীর দিকে।
-দাদুভাই এগুলা কি বলছ তুমি?কে শিখালো তোমাকে?
-অন্তু বলে উঠলো কেন দাদুভাই বলেছে।আমাকে দাদুর ছেলেবেলার গল্প শুনিয়েছে কাল।
হঠাৎ চোখ ভিজে উঠলো জহুরা বেগমের।চোখের সামনে ভেসে উঠলো পুরানো দিনের সব স্মৃতি।অন্তুর মত সেও ছোট ছিল একসময়।তবে এত প্রাচুর্য ছিলো না তখন তাদের।গ্রামের তো তেমন কারও ফ্রিজও ছিল না।ছোট্ট জহুরা ফ্রক আর হাফপ্যান্ট পরে রোজ বিকেলে বাবার পিছন পিছন ঘুরত বাইরে যাওয়ার জন্য। বাইরে বের হয়েই চোখে পরতো নানারকম ইফতারির পসরা।কোনটা রেখে যে কোনটা নিবে বুঝে ওঠাই মুশকিল।অল্প কিছু জিলাপি তো নিতেই হবে তার।আর এত কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে দোকান ঘুরে বাসায় গিয়ে কি গরম শরবত খাওয়া যায়?বরফ ঠান্ডা শরবত তো চাইই চাই।বাড়ি ফেরার পথে চোখে পরতো বাজারের এক কোণায় কিছু বিক্রেতার হাঁকডাক।”এই পাহাড়ি বরফ,পাহাড়ি বরফ”।তুষে মোড়ানো ওটা যে বরফ তা তো প্রথমে তিনি বিশ্বাসই করতেন না।

ছোট্ট একটা কুটির।পেঁয়াজ,মরিচ,ধনেপাতা তার সাথে সর্ষের তেল দিয়ে মুড়ি মাখানো।মুড়ির গামলায় টুকরো করা জিলাপি।এ তো ইফতারি নয় অমৃত!!!সবকিছু ছাঁপিয়ে ছোট্ট জহুরার চোখ থাকতে শরবতের জগে।বরফ যাতে না গলে যায়।ইফতার শেষ করে ছোট হয়ে যাওয়া বরফও তো চুষতে হবে।এই বরফের শীতলতা যে তাকে ছুঁয়ে যেত।

দিন বদলেছে,বদলেছে সময়।কোথায় চলে গেছে সেই বিক্রেতার হাঁকডাক।এখন তো তার ছেলের বাসায় দু’দুটো বরফ বানাবার যন্ত্র। কিন্তু এ বরফের ক্ষমতা নেই তার শৈশবের শীতলতা ফিরিয়ে দেবার।।

নিউজটি শেয়ার করুন...

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

    © All rights reserved © 2023
    Design & Developed BY M Host BD