শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৭ অপরাহ্ন

সোর্স আনোয়ারেই ডিবি পুলিশের সর্বনাশ

মোঃ আবদুর রহিমঃ বহুল আলোচিত-সমালোচিত বিতর্কীত সোর্স আনোয়ার এবার বিতর্কীত করলো জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। নিজেকে পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবির সোর্স পরিচয়ে সাধারন মানুষকে হয়রানী করার পাশাপাশি মহাসড়কগুলোতে কভারভ্যান ও ভোজ্য-জ¦ালানী তেলবাহী পরিবহনে ডাকাতির মূল হোতা সোর্স আনোয়ার আবারো উঠে এসেছে আলোচনায়। ফতুল্লার পুলিশ সোর্স শাওন হত্যা, নারী কেলেঙ্কারী,চাপাইনবাবগঞ্জে আমের খাচিতে করে অস্ত্র পাচারের সময় আটক, ডাকাতি মালামালসহ আটক,ডিবি পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় জনতার হাতে আটকের পর এবার ফতুল্লা থেকে জ¦ালানী তেল লুটপাটের ঘটনায় সোর্স আনোয়ারকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সর্ব মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।

একাধিক মহলের মতে, এসব বিতর্কীক কথিত সোর্সদের কারণে প্রশাসনের ভালো কাজগুলো ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। সমাজের সচেতন মহল থেকে দাবী উঠেছে এসব বিতর্কীত সোর্সদের মূলৎপাটনের। অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাল কাজগুলো ম্লান করতে এসব সোর্সরাই যথেষ্ট।

বিভিন্নসূত্রে জানাগেছে, দীর্ঘ ২২ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে নিজেকে প্রশাসনের নানা স্তরের কর্মকর্তা কিংবা সোর্স পরিচয় দিয়ে নানা ধরনের বিতর্কীত কর্মকান্ড করে যাচ্ছে রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জের হরিপুর এলাকার সামসুল হকের ছেলে আনোয়ার ওরুফে সোর্স আনোয়ার। এক সময় ফতুল্লা ডিআইটি মাঠে সাধারন মানুষের কাছ থেকে ২০/৩০ টাকা করে চেয়ে নিয়ে দিন যাপন করা আনোয়ার এখন নিজ জেলায় যাতায়াত করেন উড়োজাহাজে চড়ে। নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছে একাধিক বহুতল ভবন। সোর্স আনোয়ার ফতুল্লা থেকে বিতারিত হওয়ার পর থেকে অবস্থান নেয় রূপগঞ্জে। সেখানেও নিজেকে পুলিশ,র‌্যাব ও ডিবির সোর্স পরিচয় দিয়ে গড়ে তোলেন অপরাধের স্বর্গরাজ্য। রূপগঞ্জের কাঞ্চন এবং পূর্বাচল ৩শ ফিট হিসেবে পরিচিত স্থানে রয়েছে চোরাই তেলের বিশাল আস্তানা। এখানেই এই সোর্সের অপরাধ থেমে থাকেনি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পেশাদার অপরাধীদেও সংগঠিত করে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা-সিলেট মহা সড়কে নানা পরিবহনের ডাকাতি সংগঠিত করে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয় মহলের।

গত বছরের ৩ জুন ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করতে গিয়ে আসল ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন আনোয়ার (৪২) ও ভুলতা ফাড়ির রাইটার গণি(৪০)। এসময় তেলভর্তি একটি গাড়ি উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

এ ব্যাপারে জেলা ডিবির তৎকালীন এসআই মফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা (রূপগঞ্জ থানার মামলা নং ০৮) দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, আনোয়ার সহ একটি চক্র নিজেদের পুলিশ পরিচয় দিয়ে সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ এলাকায় বিভিন্ন সময়ে তেলবাহী গাড়ী ছিনতাই করে থাকে। গ্রেফতারের পর আনোয়ারের পর স্বীকারোক্তি অনুয়ায়ী তার গোডাউন থেকে প্রায় ৫লাখ টাকার চোরাই তেল উদ্ধার করে পুলিশ। জামিনে বের হয়ে সে আবারো নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ আদালতে দায়ের করা ইকবাল চৌধুরীর দায়ের করা মামলায় সোর্স আনোয়ার নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে ইকবাল চৌধুরী নামে ফতুল্লার তেল ব্যবসায়ী নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা খাতুনের আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী ইকবাল চৌধুরী ফতুল্লার চৌধুরী বাড়ির মৃত কুদরতুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে। মামলার সোর্স আনোয়ারসহ অপর আসামীরা হলেন জেলা ডিবির এসআই আলমগীর হোসেন, এএসআই জাহাঙ্গীর আলম এবং ডিবি পুলিশের সাবেক ক্যাশিয়ার পরিচিত নুরু মিয়া।

ইকবাল চৌধুরী মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি একজন বৈধ তেল ব্যবসায়ী। যমুনা ডিপো থেকে বৈধ ভাবে তেল ক্রয় করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। এরমধ্যে ১০ মার্চ বিকেল ৫ টার দিকে অভিযুক্ত ওই চারজন ফতুল্লা লঞ্চঘাট এলাকায় তার মালিকানাধীন মেসাস চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাদাই মাইক্রোতে এসে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে তার ম্যানেজার রুবেল ও লোকমানকে আটক করে মারধর করে। এক পর্যায়ে বাদীর গোডাউনের তালা ভেঙে ৭২টি ডিজেল ভর্তি তেলের ড্রাম (প্রতিটিতে ২২০ লিটার) লুট করে ৫ টনি তিনটি ট্রাকে করে নিয়ে যায়। সাথে রুবেল, লোকমান ও কামাল হোসনকেও গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে আনোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি সৎপথে ছিলাম আছি, আমি কখনো অন্যায়ের সাথে জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সব মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।

নিউজটি শেয়ার করুন...

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Recent Comments

    © All rights reserved © 2023
    Design & Developed BY M Host BD