সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন
হাবিবুর রহমান বাদল
সারা দুনিয়াকে স্তদ্ধ করে দিয়েছে মরণঘাতক করোনা নামক ভাইরাস। বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে এই ভাইরাস। ছাড়ছে না কাউকে। দেশের মধ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে শিল্পাঞ্চলখ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ। জেলায় করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে হার্ডলাইনে প্রশাসন। এমন বাস্তবতায় ঘরবন্দী জেলার সাধারণ মানুষ। সরকার ঘোষিত খাদ্য পৌছালেও দলীয় রীতিতে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। সুযোগ সন্ধানীরাও যেন বসে নেই। দলীয় পরিচয়ে তৎপর তারা। নিন্ম আয়ের মানুষ ছুটছে ত্রাণের খোঁজে। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারে চলছে চাঁপা কান্না। কর্মহীন হয়ে মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারে নেই খাদ্যের যোগান। যা ছিল তাও শেষের পথে। মধ্যবিত্ত পরিবার সম্পর্কে সবার কম বেশি ধারনা আছে।
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কারো নিকট সাহায্য চাইতে পারেনা বা কাউকে সাহায্য করার ক্ষমতাও নেই তাদের। তারা নিজেদের উপার্জনে নিজেরা কষ্ট করেই জীবন যাপন করেন। করোনা ভাইরাসের কারনে হোম কোয়ারাইন্টিনে থাকায় তাদের কারো চাকরী নেই, কারো ব্যবসা বন্ধ অর্থাৎ তাদের আয়- উপার্জন বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে বাসা ভাড়া, দোকান ভাড়া, মাস শেষে দোকান বাকীর চাপ, বাচ্চাদের স্কুল বেতন, মাস্টার বেতনসহ নানাবিধ খরচ বহন করতে হয়। মধ্যবিত্ত তার আত্মসম্মান নিয়ে ঘরে বন্দি, অন্য দিকে বাসার খাবার শেষ পর্যায়ে, বাজার করার মত টাকা হাতে নেই। নতুন করে যে মুদির দোকান থেকে বাকি নিয়ে আসবে তারও কোন উপায় নেই। মধ্যবিত্তরা আজ করোনার কারনে দিশেহারা। নীরব দুঃখকষ্ট ও দুশ্চিন্তার মধ্যে চলছে তাদের জীবন। এদিকে রাত পোহালেই রমজান মাস তার সাথে বাড়ছে বাড়তি খরচ। সব মিলিয়ে বর্তমানে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর অবস্থা আস্তে আস্তে কষ্টের দিনে পরিনত হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে জেলায় সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তে গৃহবন্দি সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্য তুলে দিচ্ছেন অনেকেই। সরকারও গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে মধ্যবিত্তের পাশে নেই কেউ। ঘরে খাবার না থাকলেও মধ্যবিত্তরা লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। সারাদেশে লাখ লাখ মধ্যবিত্তের অবস্থাও প্রায় একই। বর্তমান পরিস্থিতিতে কথা হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক। আবেগপ্লুত হয়ে বলেন, ‘এটা কোনো জীবন হলো। সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষুলজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশ করা যায় না। ওই যে আমরা মধ্যবিত্ত। আমাদের কোনো কষ্ট নেই। আছে শুধু সুখ।
কিন্তু এর আড়ালে আমরা যে কত কষ্টে জীবনযাপন করি, তা বোঝানো যায় না। কেউ বোঝারও চেষ্টা করে না।’ করোনাভাইরাসের আঘাতে স্থবির নারায়ণগঞ্জ। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন জেলায় বসবাস করা লাখ লাখ মানুষ। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জে মারা গেছেন অনেকে। নারায়ণগঞ্জে বহুসংখ্যক পরিবার আছে যাদের একমাত্র আয়ের উৎস নিত্যকর্ম। প্রতিদিনের কর্মের উপার্জিত অর্থে হতে টাকা আসে আর সেই টাকায় ঐ সব পরিবারের জীবন যাপন চলে। মধ্যবিত্ত আয়ের পরিবারগুলো কোনভাবে মান সম্মান নিয়ে চলাফিরা করে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে এখন কর্মহীন হয়ে পড়ায় বর্তমানে খুবই খারাপ অবস্থায় জীবন যাপন করছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে সাধারনত একমাত্র উপার্জনকারীর সংখ্যাই দীর্ঘ। একমাত্র উপার্জনকারীর অর্থেই চলে সংসারের চাকা। করোনার প্রভাবে এখন সবকিছুই বন্ধ। একমাত্র উপার্জনকারীর ব্যাক্তিকেই থাকতে হচ্ছে ঘরে। আর এ অবস্থায় পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে নিয়ে চিন্তিত স্বজনরা। আর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো প্রায় সময় সমাজের কিছু কিছু উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। অথচ আজ হয়তো যারা বাসা ভাড়া থাকে তাদের বাসা ভাড়া নিয়ে চিন্তিত, তাদের পারিবারিক খরচ করতে হয়ত খুব হিমশিম খাচ্ছে। দীর্ঘদিন আতঙ্কে কাটানোর পর এবার তাদের ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে করে অনেকেই উদ্বেগ-উৎকন্ঠার মধ্যে আছেন। তাই আমি মনেকরি বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের বিত্তবান এবং দানশীল ব্যাক্তিরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন এমনটাই প্রত্যশা করি। আর সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল পক্ষ মধ্যবিত্তের পাশে দাঁড়াবেন এটাও আশা করি।
সম্পাদক, দৈনিক ডান্ডিবার্তা
Leave a Reply